উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬/১০/২০২২ ৯:৪৯ এএম

ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের চারটি রুট পড়েছে বাংলাদেশে। এসব রুটের অন্যতম উদ্দেশ্য ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর মধ্যে সহজেই পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছে বাংলাদেশ। তবে রুট চারটিতে যুক্ত হতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কক্সবাজারের রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি এবং সম্ভাব্য রেলপথে থাকা রোহিঙ্গা শিবির নেটওয়ার্ক এতে বড় বাধা বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। এ অনিশ্চয়তা বাংলাদেশ অংশের ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কের কার্যকারিতা নিয়েই শঙ্কা তৈরি করেছে।

জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের তিনটি রুটে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আরো একটি নতুন রুট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে রুট-১ ভারতের গেদে থেকে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। এরপর ঈশ্বরদী-বঙ্গবন্ধু সেতু-জয়দেবপুর হয়ে টঙ্গী পর্যন্ত আসবে। সেখান থেকে আখাউড়ার-চট্টগ্রাম-দোহাজারী-রামু হয়েছে গুনদুম সীমান্ত দিয়ে চলে যাবে মিয়ানমারে। রুট-১-এর আরেকটি সাব-রুট আখাউড়া থেকে কুলাউড়ার শাহবাজপুর হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে।

দ্বিতীয় রুটটির শুরু ভারতের সিঙ্গাবাদ থেকে। সেখান থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। রাজশাহী-আব্দুলপুর-ঈশ্বরদী হয়ে সেটি মিশেছে রুট-১-এর সঙ্গে। রুট-৩-এর শুরুটাও ভারতের রাধিকাপুরে। এ রুট বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে দিনাজপুরের বিরল সীমান্ত দিয়ে। সেখান থেকে পার্বতীপুর-আব্দুলপুর-ঈশ্বরদী হয়ে রুট-১-এর সঙ্গে গিয়ে মিলেছে। এ তিনটি রুটের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে আরো একটি ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে রুট প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত রুটটির শুরু ভারতের পেট্রাপোলে। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর যশোর-ভাঙ্গা-মাওয়া-ঢাকা-টঙ্গী হয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় রুটের মতোই রুট-১-এর সঙ্গে গিয়ে মিলিত হয়েছে।

ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের চার রুটের প্রতিটিই আবার কক্সবাজারের রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের গুনদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার অংশের ওপর দিয়ে গিয়েছে। এ রেলপথসহ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়াল গেজের একটি সিঙ্গেল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পটির মাধ্যমে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে চলে এলেও শুরু হয়নি রামু-গুনদুম অংশের নির্মাণকাজ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রামু-গুনদুম রেলপথটি যেদিক দিয়ে তৈরি করা হবে, সে পথে একাধিক রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে। তাই এ রেলপথের কাজ শুরু করতে হলে সবার আগে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো সরিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়াও জরুরি। অন্যথায় রেলপথটির নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটবে না বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে এখনো রামু-গুনদুম অংশে কাজ শুরু করার অনুমতি পায়নি। অথচ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী ‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়াল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজটি দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন। আবার বাংলাদেশ অংশের ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করলেই ট্রান্স এশিয়ান রেল রুটটি কার্যকর হবে না। গুনদুম সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কিলোমিটার রেলপথ তৈরি করতে হবে। মিয়ানমার সেই রেলপথটি তৈরি না করলে বাংলাদেশ অংশের ২৮ কিলোমিটার রেলপথ কোনো কাজেই আসবে না। আমরা যেহেতু একদম কাছেই চলে গিয়েছি, ২৮ কিলোমিটার রেলপথটি যেকোনো সময় করতে পারব। সেটা করতে বড়জোর দু-এক বছর সময় লাগবে। কিন্তু মিয়ানমারের ৩০০ কিলোমিটার রেলপথ তৈরি করতে সময় লাগবে চার-পাঁচ বছর। তাহলে আমরা কেন শুধু শুধু রেলপথটি তৈরি করে ফেলে রাখব? এ রুটে তো আমরা তেমন যাত্রীও পাব না। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে তো আমরা ওদিক দিয়ে যেতেও পারব না। ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি ছাড়া গুনদুম পর্যন্ত যাওয়ার কোনো কারণ নেই।

জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক মফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, রামু-গুনদুম অংশের কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথটির নির্মাণকাজ লক্ষ্য অনুযায়ী এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার অংশের নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। অবশ্য জুনের দিকে বর্ষাকাল হওয়ায় কিছু জটিলতাও দেখা দিতে পারে। এজন্য আমাদের পরিকল্পনা মূল কাজগুলো জুনের মধ্যেই শেষ করার। যেন ইচ্ছা করলেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারে। তবে ২০২৩ সালের মধ্যে আমরা রেলপথটির সব কাজই শেষ করে ফেলব। সুত্র:বণিক বার্তা

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধি দল

উখিয়ার রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ৩ সদস্যের একটি বিশেষ প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধি ...

আবারও মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণ, বাংলাদেশি কিশোরের পা বিচ্ছিন্ন

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে তরিকুল (১৭) নামে এক কিশোর গুরুতর আহত হয়েছেন। সোমবার ...